সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা যুক্তরাজ্যে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ার যে অভিযোগ, তা নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যথাযথভাবে খতিয়ে দেখার দাবি পৌঁছেছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থার (এনসিএ) কাছেও।
সংস্থাটির নির্বাহী মহাপরিচালকের কাছে এমন দাবি সংবলিত একটি চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য আপসানা বেগম। চিঠিতে তদন্তের পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত সব সম্পদ জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৪শে সেপ্টেম্বর) পাঠানো এক চিঠিতে লেবার পার্টির এই নেতা লিখেছেন, আমি জানতে চাই এ বিষয়ে জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনসিএ) কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকাকালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে এসব বিষয় উল্লেখ করে আপসানা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর জমা সংক্রান্ত তদন্ত চলছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি দাবি করেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছেন।
তিনি বলেন, এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি এবং ইউকে কোম্পানি হাউসের রেকর্ডগুলোর বিষয়ে ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলো ১৫ কোটি পাউন্ডেরও বেশি মূল্যের কমপক্ষে ২৮০টি সম্পত্তি অর্জন করেছে। আল-জাজিরার তদন্তে আরও জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী আমার নির্বাচনী এলাকা পপলার ও লাইমহাউসে ৭৪টি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
আপসানা বেগম লিখেছেন, এসব সম্পত্তি বাংলাদেশের। আমি বিশ্বাস করি, সেগুলো বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা গণতন্ত্র ও নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত একটি সমাজের জন্য কাজ করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির কারনে বাংলাদেশের জীবনের মান, কর্মস্থলের অধিকার ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বলেও প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।
তিনি এনসিএ মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন অন্যায়ভাবে অর্জিত তহবিল পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইছে, আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবো যদি আপনি স্পষ্ট করেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং এই দুর্নীতির তদন্তে অভিযুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যভিত্তিক সব সম্পদ তদন্ত ও ফ্রিজ করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
‘আপনার নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, এই তহবিল ফ্রিজ ও প্রত্যর্পণ করা শুধু ন্যায়বিচারের জন্যই নয়, বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে, এটি যুক্তরাজ্যের সুনাম ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের জন্যও অপরিহার্য।’